প্রিন্ট

 

আমারবার্তা

প্রফেসর মিঞা লুৎফার রহমান, কলেজ প্রতিষ্ঠাতা


এক ষষ্ঠাদশী, সম্পর্কে নাতনী আমার

অপরাহ্ন বেলা

গ্রাম্য পরিবহন - তিন চাকার ভ্যানে চড়ে

অমসৃণ মেঠো পথে চলছে একা বাহকের টানে কেঁপেকেঁপে

পশ্চিম থেকে পূর্বে

পৃষ্ঠদেশে মুক্ত কুন্তলে লাগিয়ে রোদ

মুখখানি অপরাহ্ন রোদের ঝিকিমিকি, কিন্তু ঘর্মাক্ত

ক্লান্ত বেশ শুকনো শিউলি যেন।

সে যাচ্ছে নিজ বাড়ি রূপাপাত গ্রামে

সে আসছে প্রায় দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে

দূর বোয়ালমারী কলেজ হতে।

আমি চলেছি পূর্ব থেকে পশ্চিমে

কালিনগর সহস্রাইল মেঠো পথে একই ধরনের বাহনে

গন্তব্য আমার ফরিদপুর।

আমাদের দুজনের দেখা হলো পুতুন্তিপাড়া খরাঘাটা বৃক্ষতলে।

শুধালাম, এত সুন্দর চেহারাখানি মলিন করে

কোথা থেকে এলে এ রোদে পুড়ে!

চাঁদবদন উচু করি মৃগাক্ষী ক্ষেপণে বললো, কলেজে গিয়েছিলাম।

শুধালাম, প্রতিদিন কি এমনি করে যাও ?

উত্তরে বিকালের শিউলির কষ্ট মাখা হাসি

দিয়ে বললো, তাহলে ?

উচ্চারিত হলো আমার কন্ঠ থেকে আহারে কী কষ্ট!

উত্তরে আমার সুন্দরী নাতনী বললো,

এতই যদি দরদ তাহলে নানা,

একটা কলেজ করে দিন বাড়ির কাছে।

বললাম, কলেজ করা কি অত সহজরে নাতনী

কয়েকটি কথা-কুশল বিনিময় শেষে চললাম যে যার পথে।

কলেজ প্রয়োজন, কিন্তু কলেজ প্রতিষ্ঠা আমার নিকট

এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখার মত কঠিন

আ র, নারী শিক্ষা -সে এক কল্পলোকের স্বপ্নকাহিনী।

কত ছেলে ঝরে যাচ্ছে মাধ্যমিক পাশের পর আ র তো নারী,

কেটে গেল কিছুদিন সেই কথার অনুরণন বুকে বাজে প্রতিদিন।

কলেজ, তাহলে একটা কলেজ করে দিন বাড়ির কাছে।

বারবার কানে ধ্বনিত হয়ে থাকে, বারবার।

কলেজ প্রতিষ্ঠার ভ্রুণ সৃষ্টি হলো আমার চিত্তে

বিকেলের শিউলি বলেই তো শেষ কথা।

বেশ কিছুদিন পর

আমরা তিনভাই যাচ্ছিলাম বড় বোনের বাড়ি

গাড়িতে বসে এ-কথায় সে-কথায়

উঠে এলো এলাকায় একটি কলেজ প্রয়োজন।

আমার মনে আবার দোলা দিল অপরাহ্নের শিউলির কথা।

কলেজ, তাহলে একটা কলেজ করে দিন বাড়ির কাছে।

রূপাপাত স্কুল -

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আমি

স্কুলের মিটিং-এ ও গ্রামের কিছু লোক বাড়াবাড়ি করতো বেজায়

যা পছন্দ করতো না আমাদের গ্রামের লোকেরা -গ্রামের সম্মান বলে কথা।

একদিন বাড়ি থেকে যদুনন্দী ও কালীনগর বাজারে

যাওয়ার জন্য বের হলাম।

সাথে বড় ভাই ছিল

অনেক লোক তখন আমার সাথে হাঁটছে

আ র এটা-সেটা উন্নয়ন করার অনুরোধ করছে।

হাঁটতে হাঁটতে পশ্চিমপাড়ায় এসে গেলাম

সে পাড়ার আঃ রাজ্জাক ভাইয়ের বড় ছেলে ডাবলু

যোগ দিলো আমাদের সাথে।

স্কুলের আলোচনা মাঝখানে হঠাৎ বললো ‘কাকা, ঐ স্কুল

বাদ দেন, গ্রামে একটি কলেজ করেন।’

আমার মনে আবার দোলা দিল অপরাহ্নের শিউলির কথা

বিবর্ণ হাসিমাখা মুখ নাড়া দিলো বুকের গভীরে আরো তীব্রভাবে।

সিদ্ধান্ত নিলাম গ্রামে একটি কলেজ হবে।

ভাবলাম, চার উপজেলার মিলিত বিন্দুর লোকেরা কী বলে শুনি -

২৫ নভেম্বর ৯৪ সকলকে ডাকলাম

রূপাপাত স্কুল মাঠে,  বললাম হৃদয়ের কথা।

হাত তুলে সবাই জানালো, খুব ভালো কাজ হবে। সবাই থাকবে আমার সাথে।

কিন্তু কলেজ -

সে তো আ র বাতাসের শব্দ নয়, নদীর স্রোতও নয়, সে একটি অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা

জমি, অর্থ, উদ্যোগ - কতো কী প্রয়োজন।

জমি পাওয়া গেলো।

আমি বলেছিলাম,

যদুনন্দী হাটের দক্ষিণ পাশে হলে ভাল হয় -

আরশাদ মোল্লার ঘাট থেকে রাজ্জাক ভাইর ঘাট পর্যন্ত

ডাবলু আমাকে সমর্থন করেছিলো।

বলেছিল দেয়া হবে- কলেজ চাই।

চড়াই-উৎরাই পার হয়ে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে -

১৯৯৫ সালের ৯ অক্টোবর ক্লাস শুরু হলো।

মিলাদ, দোয়া অনুষ্ঠান হলো,

উপস্থিত ছিলনা আমার সেই নাতনী

ও ডাবলু

কিন্তু তাদের চাহিদাই পূর্ন হলো।

নগরকান্দার মাননীয়া সংসদ সদস্য

বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়াদা সাজেদা চৌধুরী

অতি অন্তরঙ্গতার সাথে কলেজ প্রতিষ্ঠায়

আমাকে সাহস ও সহযোগিতা দিয়ে

ঋণী করেছেন

সকলের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে প্রকাশ করছি

গভীর কৃতজ্ঞতা ।

তাঁর এক বক্তৃতায় তিনি এলাকার জনগণকে বলেছিলেন-

” আমি নবকামকে বিশ্ববিদ্যালয় বানাবো,

ভাই(আমাকে) আপনি সাহস নিয়েে এগিয়ে যান;

আমার কাছে যা চাবেন তাই পাবেন”

পেয়েছিও।

নবকাম ঋণী তাঁর কাছে।

জেলা প্রশাসক এম এন হুদা, চৌধুরী আব্দুল হক

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আলী আ কবর চৌধুরী

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন

পুলিশ সুপার মোঃ ফজলুর রহমান

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আঃ মতিন

আহমেদুর রহমান

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূরুদ্দীন বিশ্বাস

মুন্সী হারুন, মিলন

এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী

শহীদুল হাসান, মোঃ নূরুল ইসলাম

নির্বাহী প্রকৌশলী আঃ মোমিন

সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন রশীদ

আঃ ছালাম

তথা এলজিইডি প্রধান

অফিস, ফরিদপুর জেলা অফিস

নগরকান্দা ও বোয়ালমারী উপজেলা

অফিসের সকল প্রকৌশলী, কর্মকর্তা

কর্মচারীদের কাছে নবকাম ঋণী -

ঋণী আমি ব্যক্তিগত আমার এলাকাবাসীর জন্য।

ভাই, ছিদ্দিক, মনু ও কুন্ডুদা কলেজের

সর্বত্র তাদের ছোয়া লেগে আছে

কলেজ থেকে তারা অবিচ্ছেদ্য

যেমন অবিচ্ছেদ্য জমিদাতা অর্থদাতা, সম্পদদাতা

শ্রমদাতা পরামর্শ ও বুদ্ধিদাতা

নবকাম এলাকায় আবাল বৃদ্ধবণিতা

সকলের কাছে আমি ঋণী।

ভাল শিক্ষকের সাহচর্যে

নবকাম এলাকায় সোনার ছেলে-মেয়ে জীবন গড়বে

সুখী শান্তিময় জীবন গড়বে সুখী শান্তিময় সমাজ গড়ে উঠবে

এটাই আমার প্রার্থনা, এটাই আমার কামনা।

আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব

পবিত্রতার সাথে পালন করে

কলেজকে হৃষ্টপুষ্ট অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত

করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

সকলের দোয়াই আমার কাম্য।

কেউ দোয়া করতে কৃপণতা করলে

বা কটু বাক্য নিক্ষেপ করলে

সেটা সহ্য করার ক্ষমতা যেন

বিধাতা আমায় দেন।

সকলের মঙ্গল কামনা করি।